বিনা টাকায়
সিগারেটঃ বাড়ছে নতুন ধূমপায়ী, বাড়ছে ধূমপান। সবাই নির্বাক !
‘’ সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ধূমপান শ্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর’’ এই সাবধানী বানীটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। এই অমূল্য বানীটি দেওয়া থাকে আমাদের দেশের দেশী বিদেশি সব ধূমপান দ্রব্য সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে। অনেক আগে এটা লেখা থাকতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অক্ষরে। পরে এটা ২/৩ বছর আগে থেকে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়। ইদানিং আবার ভিন্নভাবে লেখা থাকে ‘’ ধূমপান এর কারনে ক্যান্সার হয়, ধূমপানে মৃত্যু ঘটে, ধূমপান হৃদরোগের কারন ইত্যাদি। এগুলো আসলে শুধু লেখাই থাকে, এগুলো জানেও কমবেশি সবাই। তারপরেও কি কমেছে মানুষের এই বিষপান। কমেনি মোটেই, বরং বেড়েছেই। তারপরেও আমাদের এই সিগারেট কোম্পানি গুলো আরও অধিক পরিমানে চেষ্টা করছে মানুষকে সিগারেটের প্রতি আসক্ত করতে। একটু খেয়াল করলেই চোখে পরে এইসব উদবুগ্ধকরন আপ্রান প্রচেষ্টার নমুনা। টিভিতে সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয় আনুমানিক ২০০০ সাল থেকে। তারপর থেকেই সিগারেটের বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হয় বিলবোর্ড, ব্যানার বা রং বেরঙের পোস্টারে। আর এখন মানুষের দোরগোড়ায় এসে বিনা পয়সায় সিগারেট বিতরন করে ধূমপায়ী বাড়ানোর আপ্রান প্রচেষ্টা নামী দামী সিগারেট কোম্পানিসহ
প্রায় সব কোম্পানির। আর যারা আগে থেকেই ধূমপায়ী তাদের ধূমপান আরও বাড়ানোর জন্য একই পদ্ধতি
গ্রহন করছে এই কোম্পানিগুলো। সরেজমিনে দেখা যায় কোম্পানি থেকে স্থায়ী বা অস্থায়ী
চাকুরীরত বাক্তি রাস্তা, দোকান, মহল্লা, স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে এসে নাম ঠিকানা
সহ অনেক কিছু লিখে সাধারন মানুষকে বিনা টাকায় প্যাকেট প্যাকেট সিগারেট দিচ্ছে। এর
কারন কি ?
কোম্পানির কাছে এমন
প্রশ্ন করলে তাদের উত্তর হয় এমন – তারা নাকি তাদের সিগারেটের চাহিদা জানার জন্য এই
নোংরা অসামাজিক বেআইনি পদ্ধতি নিয়েছে। যদিও এই পদ্ধতি তাদের মতে খুবই মহান এবং
আইনি। কিছু কোম্পানির প্রতি ২০ টি সিগারেটের এক প্যাকেটের দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।
তারা ধারাবাহিকভাবে সাধারন ধূমপায়ী এবং অধূমপায়ীদেরকে এই দামী সিগারেট দিচ্ছে বিনা
টাকায় বিশ থেকে একুশ প্যাকেট পর্যন্ত। বিশ প্যাকেটে সিগারেট থাকে মোট ৪০০ টি।
স্বাভাবিক একজন ধূমপায়ী যদি দিনে ৪/৫ টি সিগারেট পান করে, তবে সে এই ফ্রি সিগারেট
পেয়ে পান করছে দিনে ১০/১২ টির মতো। আর যারা অধূমপায়ী তারা এই ফ্রি সিগারেট উপভোগ
করতে গিয়ে পরিনত হচ্ছে আদর্শ ধূমপায়ীতে। এই সিগারেট বেশি বিতরন করা হচ্ছে কিশোর
এবং যুবকদের মধ্যে। যাদের বেশিরভাগই ছাত্র। আর যে ফর্মে এদের নাম, বয়স, ঠিকানা
লেখা হয় সেখানে কিশোরদের বয়স বাড়িয়ে ২০ ঊর্ধ্ব করে দেওয়া হচ্ছে, এবং তথ্য লেখার
কাগজে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হচ্ছে যে কমপক্ষে এই বাক্তি ২/৩ বা এর অধিক বছর ধরে এই
ব্রান্ডের সিগারেট পান করে। অথচ হয়ত ঐ বাক্তি কোনদিন সিগারেট ঠোঁটেও ধরেনি। এতে
করে আইনের জালে কোম্পানিকে জড়ানোর কোন সম্ভাবনা থাকেনা। আর এই কিশোর আর যুবকেরা ফ্রি সিগারেট পান করে হয়ে পড়ছে ধূমপানের নেশাগ্রস্থ।
বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা। আর যখনি এরা নতুন করে নেশা গ্রস্থ হচ্ছে বা পুরনো ধূমপায়ীরা ধূমপান বেশি করছে তখন সিগারেটের
বিক্রিটাও বাড়ছে। কারন ফ্রিতে তো আর কোম্পানি আজীবন দেবে না সিগারেট। ফ্রি দেওয়া
হচ্ছে শুধুমাত্র সিগারেটে আসক্ত করার জন্য। বাজার চাহিদা জানার জন্য নয়। বাজারে
চাহিদা জানার কথা বলে কোম্পানিগুলো ধূমপায়ী ও ধূমপান বাড়িয়ে তাদের বিক্রি অধিক করে
আয় করছে কোটি কোটি টাকা। আর প্রত্যেক ধূমপায়ীর খরচ বেড়ে আকাশ ছুঁয়ে যাচ্ছে। এমনকি
মৌলিক চাহিদা অপূর্ণ রেখেও তারা ধূমপান মেটাচ্ছে। যেখানে ধূমপান কমাতে সরকারের সহ
বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের অনেক প্রচেষ্টা, সেখানে এই অসৎ কোম্পানির অভিনব
কৌশল। মুখোশের আড়ালে থেকে তারা এই কিশোর বা যুবক থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী বা বৃদ্ধ
পর্যন্ত সকল পেশার মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে এই বিষের দিকে শুধুমাত্র নিজেদের হাজার
কোটি টাকা কামানোর উদ্দেশ্য নিয়ে। সামনাসামনি আমাদের সরকারও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও
এগুলো কিছু বিশেষ মহলের বিশেষ কারনে সরকারের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, আইনের ফাঁক দিয়ে
বেরিয়ে যায়। কারন এখানে কাজ করে এক অদৃশ্য
শক্তি, যার ফলে এগুলো বাধা বা নিয়ন্ত্রণ
করা হয় না। আবার সব বড় বড় বাক্তিরাই বিভিন্ন সময়ে অনেক দামী দামী বুলি শোনায়। কিন্তু
বাস্তবে কিছুই কার্যকর হয় না, হয়তো এই দেশ বা এই সমাজের জন্য এটাই ঠিক। যদি তাই না
হবে তাহলে এগুলো সবার সামনে সরবে চলে কোন সাহস নিয়ে। সব চলে সমানে, তালে বেতালে। আমরা
সবাই শুধু নীরব দর্শক। হয়তো আগে আমার বাবা, তারপর আমি, এর পরে হয়তো আমাদের
সন্তানেরা, তারপর তাদের সন্তানেরা ধারাবাহিকভাবে এভাবেই ধূমপায়ী হবে। আর এভাবেই
বাড়বে ধূমপান আর ধূমপায়ীর সংখ্যা। আমরা কেও কি কোনদিন পারবোনা এসব সমাজ থেকে দূর
করতে। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি আমাদের যেমন সঠিক এবং কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত
তেমনই এই সিগারেট কোম্পানিরও উচিত শুধু নিজেদের লাভের কথা না ভেবে দেশ, দেশের
মানুষ ও সমাজের দিকে দৃষ্টি দিয়ে এসব অসৎ কৌশল ত্যাগ করা এবং এমন কিছু করা যেন
ধূমপায়ীরাও ধূমপান ছেড়ে দিতে আগ্রহী হয়।